
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী,
সরাসরি করোনা- প্রাসঙ্গিক বিষয়ে নয়, লকডাউন প্রসঙ্গে একটি জরুরি বিষয় আপনার নজরে আনতে চাইছি৷
করোনা- যুদ্ধে আপনার ভূমিকা রাজ্য তথা দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করছে৷ সীমিত ক্ষমতায় ইতিমধ্যেই দৃষ্টান্তযোগ্য এমন নজির সৃষ্টি করেছেন, যা আগামীদিনে এই মহাবিপর্যয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ইতিহাসে অনেকখানি জায়গা নিয়েই থাকবে৷ এই লকডাউনের কঠিন-কালে একটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আপনার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ আজ একান্তই জরুরি হয়ে উঠেছে৷ এই বিষয়েই আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছি৷
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, লকডাউনের এই সংকট- সময়ে দয়া করে পোষ্য- চিকিৎসা পরিকাঠামো সহজলভ্য এবং সচল করে দিন৷ অসংখ্য পোষ্য এবং যে বাড়িতে পোষ্য রয়েছে, সেই পরিবারের বাকি সদস্যরা আজ অসহায় বোধ করছেন৷ আমাদের সমাজে প্রিয় পোষ্যদের তো পরিবারের একজন হিসাবেই দেখা হয়৷ পরিবারের একজন অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় থাকলে বাকি পাঁচজনের উৎকন্ঠা কোনস্তরে পৌঁছায়, তা অনুভব করতে পারেন পোষ্য-থাকা পরিবারগুলি৷
আমি এবং আমার পরিবার গত ৩-৪ দিন যাবৎ গভীর উৎকন্ঠায় অস্থির ছিলাম৷ বাড়ির এক পোষ্য হঠাৎ ‘কনভালশন’-এ আক্রান্ত হয়৷ শহরের একাধিক সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি ভেট ক্লিনিক আজও বন্ধ। যে চিকিৎসক এই পোষ্যটির চিকিৎসা করেন, তিনি শহরের বাইরের বাসিন্দা৷ ফলে এবার ওনার সাহায্য পাইনি৷ শহরের নানা জায়গায় ঘুরেও ন্যূনতম চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছি৷ ততক্ষণে ৪-৫ ঘন্টা কেটে যায়৷ শেষপর্যন্ত এক বন্ধুর সাহায্যে বৌবাজারের শতাব্দীপ্রাচীন CSPCA-র এক চিকিৎসকের সাহায্য পাই৷ উনি দেখেন এবং পরবর্তী ৩ দিন ফোন এবং ভিডিও কলে চিকিৎসা করেছেন৷ এক অসহায় পরিস্থিতি থেকে কোনওক্রমে রক্ষা পেয়েছে পোষ্যটি এবং আমরাও৷ তাও পোষ্যদের জন্য নির্দিষ্ট ওষুধ কোথাও পাইনি৷ আমরা যে ওষুধ খাই, সেই ওষুধই ব্যবহার করা হয়েছে, ডোজের তারতম্য ঘটিয়ে৷ এই চিকিৎসকের সাহায্য না পেলে হয়তো বাড়িতে শোকের আবহ তৈরি হতো৷ লকডাউনে পোষ্যদের কথাও তো ভাবা দরকার৷ আজ এক অসহায় পরিস্থিতিতে রয়েছেন বাড়ির পোষ্যরা৷
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, এটা ঠিক, আপনি যে সংশোধিত জরুরি পরিষেবা চালু রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, তাতে পশু চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শহরের একাধিক সরকারি, বেসরকারি, আধা সরকারি ভেট ক্লিনিক আজও বন্ধ। ডাক্তার, প্রয়োজনীয় ওষুধ, কিছু প্যাকেজড ফুড পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে৷ পশু হাসপাতাল, ক্লিনিক ও সংশ্লিষ্ট প্যাথলজিক্যাল সেন্টারগুলি অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার তালিকাভুক্ত করা হলেও লকডাউনে শহরের পশু চিকিৎসাকেন্দ্রগুলি বন্ধ৷ ফলে স্বাভাবিকভাবেই অসংখ্য পোষ্য অসুস্থ হয়েও চিকিৎসা পাচ্ছে না৷ খাবার মিলছে না৷ বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে৷ এতো গেলো বাড়ির কুকুর -বেড়াল- পাখির কথা৷ এছাড়া গবাদি পশু, হাঁস, মুরগি ইত্যাদির চিকিৎসাও তো সম্ভবত ব্যাহত হচ্ছে সামগ্রিকভাবে৷
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, এই লকডাউনে পোষ্য- চিকিৎসা আজ চরম সংকটে৷ বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু জরুরি পরিষেবার আওতার বাইরে, তাই বেলগাছিয়ার প্রাণী ও মৎস্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ৷ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ বলে আউডডোর বন্ধ, এমার্জেন্সি বন্ধ৷ ন্যূনতম চিকিৎসার ব্যবস্থাও বন্ধ। সল্টলেকের সরকারি ক্লিনিক,নিউটাউনে হিডকো-র পোষ্য ক্লিনিক, বৌবাজারের শতাব্দীপ্রাচীন CSPCA-র আউটডোরও বন্ধ।
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, আপনি নিশ্চয়ই জানেন,স্বাভাবিক সময়েই কলকাতায় পোষ্য-পশু চিকিৎসা পরিকাঠামো ততখানি সবল নয়। অথচ শহরের প্রতি ৫০টি পরিবারের একটিতে পোষ্য আছে৷ হাতে গোনা যে ক’টি রয়েছে, লকডাউনে তাও বন্ধ৷ আমাদের মতো অসংখ্য পরিবার রয়েছে, যারা সবাই পোষ্যদের পরিবারের অঙ্গ বলেই মনে করেন, তারা আজ বড্ড অসহায় বোধ করছেন। এক অজানা যন্ত্রণায় ভুগছেন৷
মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী, এ বিষয়েও আপনার সহজাত সতর্ক দৃষ্টি আজ এখন বড়ই প্রয়োজন৷