“সার সন্ঠে রুখ জায়ে, তো ভি সাস্তো জান” পরিবেশ রক্ষায় প্রাণ দিতে পারে বিশনয় সম্প্রদায়

0
1

বর্তমানে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে ।শিক্ষিত সমাজ ,গ্লোবাল ওয়ার্মিং সম্পর্কে বোঝাচ্ছেন সুযোগ সুবিধা মতন ।আজ এমন একটি জনগোষ্ঠীর সাথে পরিচয় করে নেওয়া যাক, যাদের কাছে পরিবেশ রক্ষা কোন ফ্যাশন নয়, চরম ধর্ম । সালটা ১৭৩০। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়। মারওয়ারের মন্ত্রী গীরিধর ভান্ডারী খেজরলি গ্রামে এসে ঘোষণা করলেন রাজপ্রাসাদের’ নির্মান কাজে কাটা হবে কিছু গাছ। খেজরলি গ্রামে ছিল বিশনয়ী দের বাস। বিশনয়ী সম্প্রদায়ের কাছে প্রাণ-প্রকৃতি, ঈশ্বরের মতোই পবিত্র। রুখে দাঁড়িয়েছিল গোটা গ্রাম।দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিল,
“সার সন্ঠে রুখ জায়ে, তো ভি সাস্তো জান।” যার অর্থ একটি মাথার বিনিময়ে হলেও যদি একটি গাছ বাঁচানো যায়, তবে তা-ই সই। গাছ বাঁচাতে গিয়ে ৩৬৩ টি কাটা শরীর সেদিন ছড়িয়ে পড়েছিল থর মরুভূমির বুকে। রাজা অভয় সিং এ ঘটনা জানতে পেরে রাজ প্রাসাদ নির্মাণ স্থগিত করে দেন, এবং সিদ্ধান্ত নেন, বিশনয়ী দের গ্রাম থেকে কোনদিন কোন গাছ কাটা হবে না। ১৭৩০ সালের এই ঘটনা, ইতিহাসের পাতায় ধুলো মাখা হয়ে গেলেও, আরেকটি ঘটনা কিন্তু বেশ টাটকা। ১৯৯৮ সালে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ সিনেমার শ্যুটিং এ নিজেদের মনের খেয়াল মেটাতে শিকারে মেতে ছিলেন সিনেমার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা।

গুলিতে সেদিন প্রাণ হারিয়েছিলো একাধিক বিরল কৃষ্ণসার ও চিঙ্কারা হরিণ। সেই ঘটনার জেরে আজও যে আইনীভাবে নাজেহাল হচ্ছেন সালমান খান। বলিউড তারকাদেরও ছেড়ে কথা বলেনি এই বিশনয়ী সম্প্রদায়। এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা মূলত বিষ্ণু ভক্ত হলেও, এদের আছে আলাদা দর্শন। তারা বিশ্বাস করে, প্রতিটি জীবন্ত জিনিসের বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। গুরু জম্ভেশ্বরকে বলা হয় এ সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক গুরু। আজ থেকে সাড়ে পাঁচশ বছর আগে তার জন্ম হয়েছিলো, ক্ষত্রিয় এক রাজপুত পরিবারে।গুরু জম্ভেশ্বরের দর্শন লিপিবদ্ধ হয়েছিলো ১২০ শব্দে, ‘শবদবাণী’ নামে। নাগরী লিপিতে লেখা সে অনুশাসনে ধারা ছিলো ২৯টি। ২৯ অর্থ বিশ নয় ।তাই এই সম্প্রদায়ের নাম বিশনয়। আজকের পরিবেশ আন্দোলনকারীরা যেখানে নগর উন্নয়নের স্বার্থে গাছ কাটাকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যেতে পারেন না ।সেখানে ৫০০ বছর প্রাচীন এই সম্প্রদায়ের মানুষেরা গাছ কাটাকে রীতিমতো অধর্ম মনে করেন। প্রকৃতি, পশু-প্রাণী সবের সহাবস্থানেই গড়ে উঠবে এই পৃথিবী। এই তাদের একমাত্র ধর্ম ।