তৃণমূলের সম্মেলন দেখার, ভাবার। কুণাল ঘোষের কলম

0
13
কুণাল ঘোষ

দলকে ক্ষমতায় আনতে পরিবর্তনের আন্দোলন কঠিন ছিল, ক্ষমতাসীন দলকে অবাঞ্ছিত মেদমুক্ত রাখাটাও কম কঠিন কাজ নয়। বামফ্রন্ট একটা সময়ে এই কাজটিতে ব্যর্থ হয়েছে।

এখন যা দেখছি, সোমবার নেতাজি ইন্ডোরেও যা বুঝলাম, তৃণমূলের শীর্ষে মমতাদি তো আছেন বটেই; সঙ্গে অভিষেক সময়োপযোগীভাবে এই অতিরিক্ত মেদ ঝরানোর কাজটায় গুরুত্ব দিচ্ছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে ক্ষমতাসীন দলের ক্ষেত্রে এটা একটা স্বাভাবিক সমস্যা। সময় থাকতে নজর না দিলে এর শারীরবৃত্তীয় ঘাতপ্রতিঘাত জটিলতা বাড়ায়। লোকসভা নির্বাচনের পর “দিদিকে বলো” কার্যকরী ফল দিয়েছিল। এবার 75 দিনের কর্মসূচি আরও ব্যাপ্ত, বিজ্ঞানভিত্তিক, নিবিড় জনসংযোগের।
পিকের টিমের উপযোগিতা সম্পর্কে আজকের আগে যদি কারুর দ্বিধা থেকেও থাকে, নেতাজি ইন্ডোরের পর সেটা কেটে যাবে।

আবেগ এবং কর্পোরেট ধাঁচের ব্যবস্থার সুষম মিশ্রণে এত বড় সুশৃঙ্খল কর্মযজ্ঞ, সোমবারের তৃণমূল কিন্তু নজর কেড়েছে তাৎপর্যপূর্ণভাবে।

দলনেত্রীর ভাষণ ও কর্মসূচি মিলিয়ে আমার পর্যবেক্ষণে ত্রিমুখী বিষয়।

1) দিল্লিতে বিজেপির সরকারের সর্বাত্মক বিরোধিতা করে দলের ঝাঁঝালো ইমেজের ধার বাড়ানো।

2) মমতাদির সরকারের উন্নয়ন ও সামাজিক স্কিমগুলিকে নিয়ে প্রচার।

3) সংগঠনকে সুসংগঠিত করা। মেদ ঝরানো। নতুন সদস্য বাড়ানো। পুরনোদের সক্রিয় করা। পারফরমারদের গুরুত্ব দেওয়া। মানুষের সামনে ঔদ্ধত্য ছেড়ে সবিনয়ে কাজ করা।

তৃণমূলের সম্পদ আবেগ।
মমতাদি দলের মুখ।
অভিষেক তার সঙ্গে কাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি, আধুনিক ম্যানেজমেন্ট মিশিয়ে দলকে এক আধুনিক চেহারা দিতে চাইছে।

এবং যেটা লক্ষ্যণীয়, অভিষেক নিজেকে ব্যক্তিগত প্রচার থেকে যথাসম্ভব দূরে রেখে পিকের টিমের মাধ্যমে কাজটা করছে।

যাঁরা তৃণমূলের সমর্থক নন বা বিরোধী, আমার এই পোস্ট তাঁদের পছন্দ নাও হতে পারে। কিন্তু আমার অনুরোধ, অন্ধ বিরোধিতা না করে রাজনীতি সচেতন মানুষ হিসেবে নেতাজি ইন্ডোরের সম্মেলনের ব্যবস্থাপনা, বার্তা ও ঘোষিত কর্মসূচিগুলি বিশ্লেষণ করুন। শাসক দল ক্ষমতাসীন অবস্থাতেই যখন বিজ্ঞানভিত্তিক জনসংযোগে নামে, তার একটা নতুন মাত্রা থাকবেই।

আমি আগে মমতাদির নেতৃত্বে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করেছি।
আজ এতদিন পর তৃণমূলের সম্মেলনে বসে, অভিষেক-পিকে জুটির এমন কর্মযজ্ঞ প্রথমবার সশরীরে দেখে, সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে, আমার মনে হচ্ছে, বিষয়টি যথেষ্ট ইতিবাচক।