KMC vote 131: শোভনের আঁতুর ঘরে ঘাসফুলের প্রার্থী এবার রত্না?

0
4

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী এপ্রিলেই কলকাতা পুরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। কলকাতা পুরসভার নির্বাচন মানেই ছোট লালবাড়ি দখলের লড়াই। একইসঙ্গে আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে স্টেজ রিহার্সাল। অন্তত শহর অঞ্চলের মানুষের মনোভাব বোঝার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে যা অ্যাসিড টেস্ট। আর এবার কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে বেশ কয়েকটি নজরকাড়া এবং গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড রয়েছে। যার মধ্যে দক্ষিণ কলকাতার বেহালা, পর্ণশ্রী এলাকার ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডটি অন্যতম।

এই ওয়ার্ড প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের আঁতুড়ঘর। এখান থেকেই বছরের পর বছর পুরসভা নির্বাচনে জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন শোভনবাবু। বর্তমানেও তিনি এলাকার কাউন্সিলর। যদিও এবারের প্রেক্ষাপট ও সমীকরণ সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে। বেশ কয়েকটি ফ্যাক্টর-এর জন্য এবার ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডটি পুরসভা নির্বাচনে নজরকাড়া ওয়ার্ড হতে চলেছে।

ফ্যাক্টর-১: শোভন চট্টোপাধ্যায় ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের জনপ্রিয় পুরপ্রতিনিধি। এতদিন পর্যন্ত নামেই নির্বাচন হতো, কিন্তু শোভনবাবুর জয় থাকতো শুধু সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু এবার সে গুড়ে বালি। ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বরের পর থেকে এলাকায় দেখা পাওয়া যায়নি শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। ওয়ার্ড-এর মানুষদের “অভিভাবকহীন” করে দিয়ে কার্যত তিনি “নিরুদ্দেশ”। এলাকার মানুষের পাশাপাশি এমনই অভিযোগ করছেন তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়।

গত আড়াই বছর ধরে শোভনবাবু এলাকায় না আসার কারণে কোনও সমস্যা, কোনও সার্টিফিকেট ইত্যাদির প্রয়োজন হলে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

ফ্যাক্টর-২: এতদিন পর্যন্ত শোভনবাবু জিতেছিলেন তৃণমূলের টিকিটে। এবার তিনি দল পরিবর্তন করে বিজেপিতে। যদিও সেটা খাতায়-কলমে। গেরুয়া শিবিরে বড়ই নিষ্ক্রিয় তিনি। বিজেপি শোভনবাবুকে নিয়ে বেশি মাতামাতিও করতে চাইছে না। অথচ ৬, মুরলিধর সেন স্ট্রিটের ম্যানেজাররা প্রথমে ঠিক করেছিলেন শোভন চট্টোপাধ্যায়কে মেয়র প্রজেক্ট করেই পুরসভা নির্বাচনে যাবেন। কিন্তু তা আর হচ্ছে না। ফলে ওয়ার্ডের মানুষ শোভনবাবুকে নিয়ে বিভ্রান্ত। এক্ষেত্রে রত্নাদেবীর বক্তব্য, যে মানুষ শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছিল, সেই মানুষের সঙ্গেই বেইমানি করে পালিয়েছেন তিনি।

ফ্যাক্টর-৩: দীর্ঘদিন শোভনবাবুর অনুপস্থিতিতে ওয়ার্ড সামলাচ্ছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। তিনি নির্বাচিত পুর প্রতিনিধি নন, যদিও এলাকার মানুষ সুখ-দুঃখ, সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে তাঁর কাছে যান। রত্নাদেবীর বক্তব্য, “শোভন চট্টোপাধ্যায় আমার স্বামী। কিন্তু তিনি একজন পুর প্রতিনিধি হিসাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করছেন না। তিনি এখানে আসেন না। পারিবারিক যদি কোনও সমস্যা থেকেই থাকে, সেক্ষেত্রে তিনি বাড়িতে নাই আসতে পারতেন। কিন্তু ওয়ার্ডে তো একটা অফিস করে বসতে পারতেন। তাহলে মানুষ তাদের সমস্যার কথা তাঁকে জানাতে পারতো। বাধ্য হয়ে আমি আমার স্বামীর ফেলে রাখা কাজ করতে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। ”

ফ্যাক্টর-৪: প্রায় দু’বছর ধরে রত্না চট্টোপাধ্যায় এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। সুখ দুঃখে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। তিনি একটা অফিস করেছেন। যেখানে সারাক্ষণই মানুষের আনাগোনা। সাধারণ মানুষ তাদের সমস্যার কথা জানাতে সকাল থেকে সেই অফিসে এসে ভিড় করছেন। রত্নাদেবী তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছেন। নির্বাচিত পুর প্রতিনিধি না হয়েও তিনি যেন বর্তমানে এলাকার প্রকৃত কাউন্সিলর।

ফ্যাক্টর-৫: এবার কলকাতা পুরসভা এলাকার যে কয়েকটি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর প্রকোপ-এ পড়েছিল, তারমধ্যে ১৩১ নম্বর ওয়ার্ড অন্যতম। রত্না চট্টোপাধ্যায় সেই সমস্যা সমাধানের জন্য এলাকার প্রতিটি প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছেন। মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি, পুরসভার ডেপুটি মেয়র তথা মেয়র পারিষদ স্বাস্থ অতীন ঘোষকে এলাকায় এনে ওয়ার্ড ঘুরিয়ে, মানুষের সঙ্গে কথা বলিয়ে সমস্যার সমাধান করেছেন।

ফ্যাক্টর-৬: শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে তাঁর স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায় ওয়ার্ডের মানুষকে অভিভাবকহীন হতে দেননি। পুকুর ভরাট থেকে ফাঁকা জমিতে ময়লা ফেলা কিংবা বেআইনি দখলদারি যেখানেই হয়েছে, সেখানেই ছুটে গিয়েছেন রত্নাদেবী। এমনকী পুরসভার বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে এলাকায় এনে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলিয়ে দিয়েছেন। সমস্যার সমাধান করেছেন।

সব মিলিয়ে এবার কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে ১৩১ নম্বর ওয়ার্ড-এর দিকে সকলের নজর। অনেকেই মনে করছেন, ঘরের লড়াই এবার দেখা যাবে রাজনীতির ময়দানে। তৃণমূলের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে রত্না চট্টোপাধ্যায়। অন্যদিকে, শোভনের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা। বাকিটা সময় বলবে…।