মূল ছবিটি, গত সোমবারের৷ কৃষ্ণনগরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সেই সভার, যেখানে মাইকের সামনেই তিনি একটি অ্যাম্বুল্যান্সকে পথ ছাড়তে নিষেধ করেছিলেন৷ পরে দাবিও করেন,তাঁর সভায় গন্ডগোল পাকাতেই ওই ফাঁকা অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়েছিল।
ছবির ভিতরের ডানদিকের ছবিটি, দিলীপ ঘোষের সভায় আটকে দেওয়া সেই অ্যাম্বুল্যান্স৷
বিজেপি নেতাদের দাবি, ওই অ্যাম্বুল্যান্সে তখন কেউ ছিলেন না।
বাঁদিকের গোল ছবিটি ধুবুলিয়ার হরিণডাঙা গ্রামের পাপিয়া বিবি-র৷ আসন্নপ্রসবা পাপিয়া তখন অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন৷
দিলীপ ঘোষ যখন মঞ্চ থেকে বলছেন, ‘এখান দিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না’, অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে ঠিক সেই সময়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন এক আসন্নপ্রসবা, ধুবুলিয়ার হরিণডাঙা গ্রামের পাপিয়া বিবি। শারীরিক পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক হয়ে ওঠায় ধুবুলিয়া গ্রামীণ হাসপাতাল তাঁকে কৃষ্ণনগরে সদর হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলো৷ পাপিয়ার পরিবার সেই মতোই অ্যাম্বুল্যান্স করে তাঁকে নিয়ে যাচ্ছিলেন সদর হাসপাতালে৷ তাঁরা জানতেনই না, কালেক্টরি মোড়ের কাছে রাস্তা জুড়ে তখন সভা করছেন এক নির্বাচিত “জনপ্রতিনিধি”, নাম দিলীপ ঘোষ৷ ঘটনাচক্রে যিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি’র এ রাজ্যের সভাপতিও বটে ৷ ঠিক যেখানে দাঁড়িয়ে দিলীপবাবু ওই অ্যাম্বুল্যান্সটিকে আটকান এবং ঘুরে যাওয়ার ‘সু-পরামর্শ’ দেন, সেখান থেকে গাড়িতে এক মিনিট গেলেই সদর হাসপাতাল।
কিন্তু মঞ্চের ডান দিক থেকে হুটার বাজিয়ে, নীল আলো জ্বালিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স আসতে দেখেই মাইকে দিলীপ ঘোষ ফতোয়া জারি করেন, ‘‘এখান দিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। লোকে রাস্তায় বসে রয়েছে। ডিসটার্ব হয়ে যাবে। ঘুরিয়ে অন্য দিক দিয়ে নিয়ে যান।’’
সেদিন ওই অ্যাম্বুল্যান্সে মেয়ে পাপিয়া বিবি’র সঙ্গেই ছিলেন মা সাহিনুর মিস্ত্রি৷ তিনি জানলা দিয়ে হাতজোড় করে রাস্তা আটকে দিলীপবাবুর বক্তৃতা শুনতে থাকা লোকজনকে অনুরোধ করেন, রাস্তাটা একটু ছাড়ার জন্য। কেউ রাস্তা ছাড়তে রাজি হয়নি। দিলীপবাবু তখন মাইকে বোঝাচ্ছিলেন, CAA কত ভালো, কত প্রয়োজনীয়৷
সাহিনুর মিস্ত্রি’ই জানিয়েছেন, ‘‘তখন মাইকে এক নেতা বলছেন, অ্যাম্বুল্যান্স ঘুরিয়ে নিতে হবে। মেয়ে তখন ছটফট করছে। ড্রাইভারও একই অনুরোধ করছেন। কেউ তো রাস্তা দিলোই না, উল্টে মিটিংয়ের কিছু লোক এসে অ্যাম্বুল্যান্স পিছনে ঠেলতে লাগলো।’’
ওই অ্যাম্বুল্যান্সের চালক রথীন্দ্রনাথ বিশ্বাস বছর দুই হল এই রুটে অ্যাম্বুল্যান্স চালাচ্ছেন। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, “আশেপাশের গলির রাস্তাঘাট ততটা চিনিনা৷। অ্যাম্বুল্যান্স ঘুরিয়ে রাস্তার লোকজনদের জিজ্ঞাসা করে এগোতে থাকি। কিন্তু কিছুটা গিয়ে দেখি, রাস্তায় গর্ত করে মাটির তলা দিয়ে বিদ্যুতের কেব্ল পাতা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে ফের অ্যাম্বুল্যান্স ঘোরাই। খানিক বাদেই আবার সামনে পড়ে তৃণমূলের মিছিল। কিন্তু মিছিলের লোকেরা রাস্তা করে দেন। রথীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘১ মিনিটের রাস্তা ঘুরে আসতে লেগে গেল প্রায় ২৫ মিনিট। কখনও এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি।’’
ওই রাতেই অস্ত্রোপচার করে পাপিয়ার সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। হাসপাতালে শুয়েই সংবাদমাধ্যমে পাপিয়া বলেন, ‘‘তখন খুব অসহায় লাগছিলো। ভাবছিলাম, যে লোকটা মাইকে আমাদের ঘুরপথে যেতে বলছে, তার বাড়িতেও হয়তো মা-বোন আছেন। তাদের যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হত, তিনি কি করতেন? ওই মিটিংয়ে যে মহিলারা আছেন, তাঁরাও তো কারও মা-বোন। তাঁরাই বা কেন এগিয়ে এসে আমাদের রাস্তা করে দিচ্ছেন না? মনে-মনে তখন আল্লাকে ডাকছি আর ভাবছি, পেটের সন্তানকে সুস্থ ভাবে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারব তো?”
এদিকে জানা গিয়েছে, সোমবারের ওই ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার রাতেই নদিয়ার কোতোয়ালি থানায় দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রুজু করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-হিংসা-অশান্তি পুরো বন্ধ হলে তবেই CAA নিয়ে আর্জি শোনা হবে, বলল সুপ্রিম কোর্ট