
গত কয়েকদিন ধরেই খবরের শিরোনামে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়। এটাই ‘আমার’ বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেই জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ ও সুন্দর সময় কাটিয়েছি আমি, আমরা। কিন্তু এই জেএনইউ-কে আমি চিনি না। ক্যাম্পাসে এই হিংসা, রক্তপাত আমার সম্পূর্ণ অচেনা। আমাদের সময়েও রাজনৈতিক মতাদর্শের বিভেদ ছিল। আর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় চিরকালই রাজনৈতিক ভাবে সচেতনতা তৈরির একটা জায়গা। স্পষ্ট রাজনৈতিক মেরুকরণ ছিল আমাদের সময়ও। আবার যাঁরা সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত নন, তাঁরাও স্বাধীনভাবে তাঁদের মত প্রকাশ করতে পেরেছেন। তর্ক-বিতর্ক হয়েছে, মিটিং-মিছিল হয়েছে, কিন্তু এভাবে নিগৃহীত হতে হয়নি পড়ুয়াদের।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি সারারাত খোলা থাকে। প্রোজেক্ট তৈরির সময় রাত তিনটেতেও আমরা দু-তিনটি মেয়ে মিলে সেখানে গিয়েছি, লেখাপড়া করেছি- কোথাও, কখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিনি। মাঝরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে চত্বরে হেঁটে বেড়াতে ভয় পায়নি। কিন্তু এটা কী? মেয়েদের হস্টেলে দুষ্কৃতীরা ঢুকে মারধর করছে, ভাঙচুর করেছে এটা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। এই জেএনইউ-কে আমি চিনি না। রাজনীতির মধ্যে যাচ্ছি না। কোন দলের সদস্যরা কোন দলকে আক্রমণ করেছে- সেই বিষয়টি পাশে সরিয়ে রেখেই বলছি, ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ুয়াদের মারধর করা হচ্ছে, আর সেটা হচ্ছে জেএনইউ-তে। এটা ভাবতেই পারছি না।
আমি নিজেও এখন বেঙ্গালুরুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। একজন কো-অর্ডিনেটর বা অধ্যাপিকা হিসেবে বলতে পারি, ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব অধ্যক্ষ, উপাচার্য, অধ্যাপকদের। এক্ষেত্রে জেএনইউ-র উপাচার্য জগদেশ কুমারের ভূমিকাতেও আমি হতবাক। তিনি কেন সামনে এসে বিবৃতি দিচ্ছেন না? উপাচার্য নিজেই যদি ভয় পান, তাহলে পড়ুয়াদের নিরাপত্তা দেবেন কীভাবে! সবশেষে এটুকুই বলতে পারি, এই পরিস্থিতির বদল হোক। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই পড়ুয়ারা যেন নিরাপদে থাকে। আমার তারুণ্যের সব ভালোমন্দের সাক্ষী জেএনইউ দ্রুত পুরনো, চেনা চেহারায় ফিরে আসুক তাই চাই।
আরও পড়ুন-জেএনইউ-তে ঐশী ঘোষের উপর হামলা ‘সাজানো নাটক’ বলে মন্তব্য দিলীপের