সংসদে বিল পাশে সাফল্য, আর দেশজুড়ে বিক্ষোভ, নয়া বিড়ম্বনায় বিজেপি

0
3

লোকসভা ভোটে বিপুল আসনে জিতে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরই প্রতিশ্রুতি পূরণে তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই কি নিত্যনতুন বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বিজেপিকে? অথচ লোকসভা ভোটে জয়লাভের পর সংসদের যে দুটি অধিবেশন বসেছে, দুটিতেই কিন্তু বহু সংখ্যক এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ হয়েছে। রাজ্যসভায় এনডিএ-র সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও যেভাবে বিরোধী ঐক্যে বারবার চিড় ধরেছে তার পিছনে বিজেপির সফল কৌশলেরও ভূমিকা অনেকটাই। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যেভাবে জম্মু-কাশ্মীরে 370 ধারা বিলোপের মত বিল পাশ করিয়েছে তা নিঃসন্দেহে তাদের বড় সাফল্য। তিন তালাক প্রথা বিলোপ বা কাশ্মীরে 370 ধারা রদের মত ইস্যুতে বিতর্ক-সমালোচনা যাই থাক, কোনও দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জিতে ফেরার পর নিজেদের ম্যানিফেস্টোতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করে বলতেই পারে, এই কাজগুলি করার জন্যই তো জনগণ আমাদের ক্ষমতায় পাঠিয়েছে। তাহলে তা করা হবে না কেন? সত্যি কথা বলতে কী, ভারতের বহু রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসার আগে দলের ম্যানিফেস্টোতে নানা প্রতিশ্রুতি দেয় এবং ক্ষমতায় আসার পর তা নিয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করে না। সেদিক থেকে বিজেপি অন্তত বিতর্কিত বলে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে দোদুল্যমানতা দেখায়নি বা উত্তেজনা তৈরি হতে পারে ভেবে পিছিয়ে আসেনি। সাহসের সঙ্গে ঝুঁকি নেওয়ার এই প্রবণতা যে দ্বিতীয় মোদি সরকারের একাধিক পদক্ষেপে লক্ষ্য করা যাচ্ছে তা উল্লেখ করতেই হবে।

কিন্তু তাহলে সংসদে প্রায় অনায়াসে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করিয়ে নাগরিকত্ব আইন তৈরির পর এখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় এই বিরোধিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে কেন? সাধারণ মানুষ এই ইস্যুতে সরকারের বিরুদ্ধে কেন এত অনাস্থা জানাচ্ছেন? এর থেকেই স্পষ্ট, সংসদে বিল পাশ করে মর্যাদার লড়াই জেতায় বিজেপির যে অগ্রাধিকার ছিল তার সিকিভাগও ছিল না মানুষের মন বোঝা বা বোঝানোর ক্ষেত্রে। দেশের মানুষ অসম এনআরসি-র নমুনা দেখার পরও অমিত শাহরা যখন গলার শির ফুলিয়ে 2024-এর মধ্যে সারা দেশে এনআরসি করব বলে চেঁচালেন, তখন তাঁরা সেই মানুষগুলোর কথা ভেবেছিলেন কি? যাঁদের কাছে বেঁচে থাকার লড়াইটাই কঠিনতর হচ্ছে রোজ, যাঁদের জীবনটাই অনিশ্চিত সুতোর উপর দাঁড়িয়ে! অমিত শাহরা কি আশা করেছিলেন এইসব দরিদ্র, প্রায় নিরক্ষর ভারতবাসী এক কথাতেই বুঝে যাবেন কোন এনআরসি সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে আর কোনটা করবে সরকার, কী তাদের পার্থক্য, কেন আগের নিয়ম এখন চলবে না? এনআরসি নিয়ে আজ এই যে এত অসন্তোষ, বহু মানুষ এখনও তো বুঝতেই পারছেন না এনআরসি ভাল হলে অসমে এই কাণ্ড হয় কী করে? পরে যদি অসম এনআরসি বাতিল হয় তখন এর জন্য খরচ হওয়া 1600 কোটি টাকা কি জলে যাবে? এর দায় কে নেবে? কোর্ট না সরকার? অনুপ্রবেশ-বিরোধিতা করতে গিয়ে দেশের নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি নিশ্চয়ই কোনও দায়িত্বশীল সরকারের কাজ হতে পারে না!

আজ এইভাবে নাগরিকত্ব আইন এবং নাগরিকপঞ্জি ইস্যুতে সরকারের যে মুখ পুড়ছে, তার পিছনে শাসক দল বিজেপির সাংগঠনিক ব্যর্থতাই বিরাট। বিজেপি মানুষকে সঠিকভাবে বোঝাতে পারেনি বা মানুষ বুঝল কিনা তা বোঝারও চেষ্টা করেনি। এই সুযোগে বিরোধীরা নিজেদের মত প্রচার করে শূন্যস্থান পূরণ করেছে। গ্রাউন্ডওয়ার্ক না করেই মাঠে নেমে পড়েছিল সরকার। এখন মুখ পুড়ছে। তবে এর জন্য মোদি সরকারের যত না প্রশাসনিক ব্যর্থতা, তার কয়েকগুণ ব্যর্থতা বিজেপির সংগঠনের। নাগরিকত্ব-বিতর্ককে কেন্দ্র করে গেরুয়া শিবিরের সাংগঠনিক ব্যর্থতা যেভাবে বেআব্রু হয়েছে তা দ্রুত কাটিয়ে ওঠাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। বিলম্বিত প্রচার শুরুর পর বিজেপি তা কতটা করে উঠতে পারে সেটাই দেখার।