রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনাল ইসলামবাদের বিশেষ আদালত। কিন্তু তাঁকে পাকিস্তানে ফিরিয়ে সাজা কার্যকর যাবে কি? এবিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র জানান, এই সম্ভাবনা খুবই কম। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, বন্দি প্রত্যার্পণ চুক্তি এতই জটিল যে রাজনৈতিক ব্যক্তি ও প্রভাবশালীদের ক্ষেত্রে কার্যকর করা প্রায় অসম্ভব। এই চুক্তি থাকলেও, এক্ষেত্রে সাফল্য সীমিতি। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলিতে বন্দিদের বেশ কিছু সুযোগ ও স্বপক্ষে কথা বলা অধিকার আছে। এর জেরে বন্দি প্রত্যার্পণের অনুরোধ মানে না তারা। এক্ষেত্রে বিজয় মালিয়ার উদাহরণ দেন তিনি।
২০০৭-এ প্রেসিডেন্ট থাকার সময় পাকিস্তানের সংবিধান বাতিল করেন। সাংবিধানিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এর জেরেই তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দায়ের করেন আরেক প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। নওয়াজের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ জানান, আগেই মুশারফকে দেশদ্রোহে অভিযুক্ত করতে চেয়েছিলেন তাঁর বাবা। তখনই নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়।
২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের শাসক ছিলেন মুশারফ। খুব কম শাসকই এতদিন সে দেশে ক্ষমতায় থাকতে পেরেছেন। ২০০৮-এ স্বেচ্ছানির্বাসনে যান। ২০১৩-র মার্চে পাকিস্তানে ফেরেন তিনি। ভোটে দাঁড়াতেও চান, কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগে মামলা চলায় তাঁর ভোটে দাঁড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত।
আপাতত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে রয়েছেন পারভেজ মুশারফ। দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে ৭ বছরের কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সেই মামলায় জামিন পেয়েছেন তিনি। ২০১৬-র ১৮ মার্চ চিকিৎসার জন্য দুবাইয়ে যান প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট। আর পাকিস্তানে ফেরেননি তিনি। বিশেষ আদালত তাঁকে অপরাধী ঘোষণা করলেও আদালতে হাজির হননি মুশারফ। বারবার আদালতে হাজির না হওয়ায় প্রাক্তন প্রেসিডেন্টকে পলাতক বলে ঘোষণা করে পাক আদালত। আদালতের নির্দেশে বাতিল হয় পাসপোর্ট সহ সব পরিচয়পত্র। পাকিস্তানে থাকা তাঁর সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়।
বর্তমানে পাকিস্তানের বাসিন্দা নন মুশারফ। দুবাইয়ের নাগরিকত্বও নিয়েছেন তিনি। চিকিৎসার জন্যে বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন মুশারফ। এ মাসের শুরুতে হাসপাতালের বিছানা থেকে এক ভিডিও বার্তায় তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেন প্রাক্তন পাক প্রেসিডেন্ট।
তিনিই পাকিস্তানের প্রথম সামরিক শাসক, যিনি সংবিধান লঙ্ঘনের অপরাধে শাস্তি পেলেন। এখন প্রশ্ন উঠছে তাঁর দেশে ফিরিয়ে শাস্তি কার্যকর করতে পারবে তো পাক সরকার? ওমপ্রকাশ মিশ্র জানান, যদি দুবাইয়ের বাসিন্দা হিসেবে মুশারফ লন্ডনে যান, তাহলে পাকিস্তানে তাঁকে পাঠানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, যে দেশের পাসপোর্ট নিয়ে ইংল্যান্ডে গিয়েছেন সেখানে তাঁকে ফেরত পাঠাবে তারা।
আরও পড়ুন-এনআরসির প্রতিবাদে সুর চড়ালেন সেলিম