দুর্নীতি আর পেশীশক্তির অভিযোগের মধ্যেও খড়গপুর উপনির্বাচনে অ্যাডভান্টেজ তৃণমূল

0
6

২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা-সহ খড়গপুর শহরেও তৃণমূলের প্রভাব বেড়েছে। বর্তমানে খড়গপুর পৌরসভা শাসক দলের দখলে।

কিন্তু খড়গপুর সদর আসনটি এখনও নিজেদের দখলে নিতে পারেনি ঘাসফুল শিবির। যদিও ২০১১সালে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে এই আসন লড়েছিল তৃণমূল। জিতেছিলেন কংগ্রেসের জ্ঞান সিং সোহনপাল। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালের নির্বাচনে এককভাবে প্রার্থী দিয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু তাদের প্রার্থী রমা প্রসাদ তিওয়ারি তৃতীয় হয়েছিল। সেবার বামেদের সমর্থনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কংগ্রেসের জ্ঞান সিং সোহনপাল, কিন্তু তাঁকে হারিয়ে আসনটি প্রথমবারের জন্য নিজেদের দখলে নিয়েছিল বিজেপি। জিতেছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এখন তিনি সাংসদ।

এবার উপনির্বাচনের আগে খড়গপুর পুরসভার যে ৩৫টি ওয়ার্ড নিয়ে খড়গপুর সদর বিধানসভা অঞ্চলটি তৈরি, তার মধ্যে ২৬টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের কউন্সিলর। উপনির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী আবার পৌরসভার চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকার। গোটা বিধানসভা এলাকায় যাঁর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে।

ত্রিমুখী লড়াইয়ে ময়দানে এবার খড়গপুর সদর আসনটি প্রথমবারের জন্য তৃণমূলের দখলে আসা শুধু সময়ের অপেক্ষে। এখন বিশ্ব বাংলা সংবাদকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই জানালেন তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকার। তিনি বলেন, “মানুষ এই তিন বছরে বিজেপির ভাওতাবাজি বুঝে গিয়েছে। দিলীপ ঘোষ এই তিন বছরে এলাকার উন্নয়নে কিছুই করেননি। এলাকার যেটুকু উন্নতি হয়েছে, তার পুরোটাই করেছে পৌরসভা।”

উপনির্বাচনে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপি নাকি বাম সমর্থিত কংগ্রেস? উত্তরে প্রদীপ সরকার বলেন, “এবার উপনির্বাচনে সেই অর্থে প্রতিপক্ষ কেউ নেই। আর যিনি বিজেপির টিকিটে দাঁড়িয়েছেন, তিনি নকল বিজেপি। খড়গপুরের আসল বিজেপি প্রদীপ পট্টনায়েক। যিনি টিকিট না পেয়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছে। লড়াইটা মূলত তাঁর সঙ্গে। আর এই নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের কোনও গুরুত্ব নেই।”

কিন্তু ২০১৬ সালে তৃণমূল এখানে তৃতীয় হয়েছিল। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকেই শুধু ৪৫ হাজার ভোটে লিড পেয়েছে বিজেপি। সেক্ষেত্রে অঙ্কের হিসেবে অনেকটাই পিছিয়ে তৃণমূল। প্রদীপ সরকারের দাবি, অঙ্কের হিসাব উপনির্বাচনে কোনও কাজ করবে না। এবার খড়গপুরের মানুষ দু’হাত তুলে তাঁকে ভোট দেবেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ নিয়ে তিনি লড়ছেন। এখানে প্রার্থী তিনি হতে পারেন, কিন্তু মানুষ ভোট দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন দেখে। তাই এখন তিনি শুধু তৃণমূল নয়, খড়গপুরের মানুষের প্রার্থী।

প্রথমবারের জন্য খড়গপুর সদর আসনটি নিজেদের দখলে নেওয়ার জন্য মাটি কামড়ে লড়াই করছেন প্রদীপ সরকার। প্রচারে দিন-রাত এক করে ফেলছেন তিনি। ছোট-বড় মিটিংয়ের পাশাপাশি প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে তৃণমূল প্রার্থী। খড়গপুর রেল শহরে প্রচুর অবাঙালি মানুষের বসবাস। তাদের ভোটের একটা বড় অংশ বিজেপির দিকে যায় বলে মনে করা হয়। তৃণমূল প্রার্থী অবশ্য তা মানতে নারাজ। তিনি বলেন, “খড়গপুরে সমস্ত ভাষাভাষির মানুষ একসঙ্গে থাকেন। সমস্ত ধর্মের মানুষ পাশাপাশি থাকেন। আর তৃণমুল কংগ্রেস সমস্ত মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে। সকল ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান এখানে পালিত হয়। সুতরাং, ধর্ম বা ভাষার ভিত্তিতে এখানে ভোট হবে না। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখেই ভোট দেবেন।”

খড়গপুর সদরের ৩৫টি ওয়ার্ডে গেলেই দেখা যাবে তৃণমূলের ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন, পোস্টার, ব্যানার, দেওয়াল লিখনে ভরে গিয়েছে। বড় রাস্তার পাশে তৃণমূল নেত্রী ও তৃণমূল প্রার্থীর কাট আউটে ছয়লাপ। প্রচারের ঝাঁজে বিজেপি ও বাম-কংগ্রেস অনেকটাই পিছিয়ে। মালঞ্চ রোডের উপর বড় মসজিদের পাশে তৃণমূলের পার্টি অফিস গমগম করছে। মিটিং-মিছিলেও ভিড় বেশি শাসক দলের।

আর এখানেই তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি আর পেশীশক্তির অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা। বিজেপি প্রার্থী প্রেম চাঁদ ঝাঁ-এর অভিযোগ, তৃণমূল প্রার্থী টাকা ছড়াচ্ছেন। টাকা দিয়ে ভোট লুটের চেষ্টা চলছে। তাঁর আরও দাবি, পুরসভায় ব্যাপক দুর্নীতি চলছে। যে প্রদীপ সরকারের পাঁচবছর আগে কিছুই ছিল না, সে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক।

এখানেই থেমে থাকেননি বিজেপি প্রার্থী। এলাকায় তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে তিনি সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছেন। বলছেন, পুরসভার বিরোধী কাউন্সিলরকে বন্ধুকের নলের সামনে দাঁড় করিয়ে দলবদলে বাধ্য করা হয়েছে। উপনির্বাচনেও সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করছে তৃণমূল। তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে একই সুর বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের।

তবে নির্বাচনের কয়েক ঘন্টা আগে খড়গপুর রেল শহরের রাস্তা-ঘাট, আনাচে-কানাচে কান পাতলেই পালাবদলের গল্প শোনা যাচ্ছে। সরাসরি মুখ না খুললেও, এলাকার মানুষের আকার-ইঙ্গিতে স্পষ্ট, এবার পালাবদল ঘটবে খড়গপুরে। বিধানসভায় একবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে সুযোগ দিতে চায় খড়গপুরবাসী। তাই যতই দুর্নীতি আর পেশীশক্তির অভিযোগ থাকুক না কেন, খড়গপুর উপনির্বাচনে কিছুটা হলেও অ্যাডভান্টেজ তৃণমূল।