কগনিজেন্টের ছাঁটাই : মনে পড়ছে বামেদের গালাগাল দেওয়ার দিনগুলো

0
14
দেবাশীষ বিশ্বাস

একসময় আইটি কর্মীরা নিজেদেরকে অন্য গ্রহের মানুষ মনে করতেন। তাঁরা সবসময় ইউনিয়ন, অ্যাসোসিয়েশন, সংগঠন করাকে ঘৃণ্য ন্যক্কারজনক বলে মনে করতেন। তাঁরা মনে করতেন ইউনিয়ন, আন্দোলন, বন্ ধ, এসবের জন্য এ দেশের কোনও উন্নতি হচ্ছে না, এবং এজন্য তাঁরা বামপন্থীদের দায়ী করতেন, এবং সরাসরি বলতেন বামপন্থীরা দেশ থেকে মুছে গেলেই দেশের মঙ্গল। অনেকের মনে পড়বে শ্যামল চক্রবর্তী, গুরুদাস দাশগুপ্ত, রবীন দেব ইত্যাদি বাম ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের এক বনধের দিনে আইটি কর্মীরা কি অশ্রাব্য গালাগালি না করেছিলেন!
হ্যাঁ, তাঁদের প্রার্থনা পূর্ণ হল, বামপন্থীরা দুর্বল হয়ে গ্রামভিত্তিক আন্দোলনে নিজেদের গুটিয়ে নিল, তখন এই সব নব্য সাহেবদের উল্লাস ছিল দেখার মতন।

আর আজ? কগনিজেন্ট টেকনোলজি সলিউশন ১২হাজার কর্মীকে দ্রুত ছাঁটাইয়ের কাজ শুরু করেছে। মনে রাখা ভাল, এই মার্কিন কম্পানি সিটিএসের প্রায় বারো আনা কর্মী ভারতের আর কাজও হয় ভারতে। কলকাতাতেই সিটিএস-এর পরও ৩০ হাজার কর্মী আছে। শোনা যাচ্ছে বেশী ছাঁটাই হবে কলকাতা আর চেন্নাইয়ের কর্মীদের। পরে আরও ছাঁটাই হবে।
সিটিএসের সিইও ব্রায়ান হাম্ফেরিস প্রত্যেক কর্মীদের রীতিমতো নিয়মিত ই-মেইল করে হুমকি দিচ্ছেন, দ্রুত ছাঁটাই হওয়ার জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে। আতঙ্কে ঘুম হারিয়েছেন কর্মীরা। সিটিএস সিদ্ধান্ত নিয়েছে মধ্য স্তরের ম্যানেজমেন্ট অফিসারদের প্রথমে ছাঁটাই করা হবে। কর্মীরা “সেটিএস কনফেসান্স” নামে এক ফেসবুক গ্রুপ তৈরি করে নিজেদের আতঙ্কের কথা ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বলছেন এই মিড রেঞ্জ ম্যানেজাররা প্রায় ১০-১২বছর চাকরি করেছেন, বয়স ৩৭-৪০ এর কাছাকাছি। তাঁদের বেতন ভাল হলেও ফ্ল্যাট, দামি গাড়ী, সন্তানদের দামী স্কুলে পড়ানো এসবের কারনে প্রায় প্রত্যেকের বড় বড় ঋণের ইএমআই ভরতে হয়। ফলে একমাস বেতন না পেলে পথে বসতে হবে। আর এই বয়সে ভাল চাকরি পাওয়াও মুস্কিল।

প্রায় একই রকম মেইল হুমকি বা ছাঁটাই এর সম্ভাবনা শোনা যাচ্ছে টিসিএস, কেপেজেমেনি, টেক মাহিন্দ্রা, ওইপ্রো, আইবিএম-এর মতো ডাকসাইটের কোম্পানিতেও। এই সমস্ত আইটি কোম্পানির কর্মচারীরা দিল্লিতে নতুন সংগঠন তৈরি করেছেন ” “All India IT & ITES Employee’s Union”।
এবং তারা সেই বহু দোষের দোষী বাম নেতৃত্বকে স্মরণ করেছেন আন্দোলনের পথ প্রদর্শনের জন্য। ফেসবুক, ট্যুইটারে রীতিমতো আর্তনাদ করে নিজেদের দুরবস্থার কথা জানাচ্ছেন এবং অতীত থেকে ইউনিয়ন না করার অপরাধ স্বীকার করছেন। যাঁরা ছিলেন ইউনিয়নের সবচেয়ে বিরুদ্ধে, আজ তাঁরাই পাগলের মতন ইউনিয়ন চাইছেন। কিন্তু বামেরা তো আর সেই জায়গায় নেই।

আজ, অমর্ত্য সেন এর কথা তাঁরা হাড়ে হাড়ে বুঝছেন, কমিউনিস্টরা মুছে গেলে তাঁদের কতটা ক্ষতি হবে জানি না, কিন্তু দেশের বিরাট সর্বনাশ হবে।

আরও পড়ুন-হাওড়ায় ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু কলেজ ছাত্রীর