
বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ঘিরে যা হল, তার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা:
1) কেন বাবুলকে ঘিরে এই অসভ্যতা হল? একজন মন্ত্রী বা শিল্পী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে ঘোষিত অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন না? বিক্ষোভ বা কালো পতাকা স্বীকৃত প্রতিবাদ। কিন্তু গায়ের জোরে পথ আটকে শারীরিকভাবে নিগৃহীত করার এই ঘটনা কুৎসিত। অতিবাম সংগঠনের এই বেয়াদপি অসহ্য। তারা ভাবে কী?
2) বাবুলকে নিগ্রহের এই ঘটনা ঘটতে থাকে এবং তা টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার হতে থাকে বলে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় বাবুলের দলের সমর্থকরা হাজির হন এবং আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠেন। তাদের আচরণও নিন্দণীয়; কিন্তু শুরু তাঁরা করেন নি। অন্য যে কোনো দলের সমর্থকরাও যদি খবর পেতেন তাঁদের নেতা বা নেত্রীকে ঘিরে মারা হচ্ছে, একই প্রতিক্রিয়া হত। উদাহরণ বহু আছে।
3) অতিবাম সংগঠনের এই বেয়াদপরা বুঝল না, তাদের এই অসভ্য আচরণে আসলে বিজেপির লাভ হল। বাবুল শান্তিতে অনুষ্ঠান করে এলে বড় কোনো খবর হত না। এই অযৌক্তিক অতিপাকামির জন্য দিনভর প্রচারে বাবুল ও বিজেপি। এতে লাভ বিজেপির। অতিবোদ্ধা ডেঁপো কয়েকটা অসভ্য এটা বুঝল না। তারা বাধা দিয়ে গোলমাল না পাকালে বিষয়টা শুরুই হত না।
4) বাবুল দায়িত্বশীল ও কৌশলী ভূমিকার পরিচয় দিয়েছেন। নিজেদের দেহরক্ষীদের সক্রিয় করেন নি। বরং অপরিণত বেয়াদবদের কোর্টে বল রেখে ঠান্ডা মাথায় বড়সড় প্রচার নিয়েছেন।
5) উপাচার্যর ভূমিকা লজ্জাজনক। তিনি জানেন না কী হচ্ছে। মন্ত্রী নিগৃহীত, তবু তিনি পুলিশ ডাকবেন না। তাঁর নিয়ন্ত্রণ নেই। শেষে মাঝপথে গিয়ে হাসপাতালে শুয়ে। এভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে চলে না। কেন আগেই পুলিশ ডাকবেন না? বড় কিছু হয়ে গেলে ইস্তফার ন্যাকামিতে ক্ষতিপূরণ হত? পুলিশ যেতে বিলম্ব ও রাজ্যপালকেন্দ্রিক ঘটনাক্রমের পরিস্থিতি তৈরি করে দেন উপাচার্যই।
6) শুক্রবার সকাল থেকে আরেক কান্ড। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে ছবিসহ: এই ছেলেটি বাবুলকে মেরেছে। নাম, বাবার নাম, ঠিকানা। সত্যমিথ্যা যাই হোক, এর জেরে বহু জায়গায় অশান্তি হতে পারে। তার আগেই যারা সত্যিই বাবুলকে মেরেছে, পুলিশ ব্যবস্থা নিন। দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিক প্রতিষ্ঠানও। একজন মন্ত্রী ঢুকলে বিনা প্ররোচনায় মারবে, এরকম গুটিকয় বাঁদরকে কেন বরদাস্ত করা হবে?
7) এই অতিবাম সংগঠন আর এসএফআইকে মেলানো ঠিক নয়। এসএফআইর দুতিনজনকে দেখা গেছিল ঠিকই। কিন্তু মূল অসভ্যতা অতিবাম কয়েকজনের। যদিও দিল্লিতে যোজনা পর্ষদের সামনে অমিত মিত্রের নিগ্রহের নায়ক ছিল এসএফআই ও সহযোগীরা; তবু, বাবুলের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এস এফ আই নয়। বরং তাদের নেতৃত্বের বিবৃতি খানিকটা দায়িত্বশীল বলা যায়।
8) গোটা ঘটনার ত্রিসীমানায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেই। নেই অধ্যাপকদের নানা মতামতের সংগঠনগুলিও।
9) বিকেলের পর থেকে এবিভিপি বা বিজেপি সমর্থকদের জমায়েত ও তান্ডব প্রতিবাদযোগ্য। তবে বাবুল নিগৃহীত না হলে বা সময়ে পুলিশ এলে যেহেতু তাদের সক্রিয়তা ঘটত না, তাই এই ক্ষেত্রে অন্তত সমান সমান দোষারোপের পক্ষে নই।
10) বিজেপির বিরুদ্ধে অগণতান্ত্রিক আচরণ বা অসহিষ্ণুতার অভিযোগ আনা হবে; আবার সেই বিজেপির নেতাদের উপরই এই অসভ্যতা হবে; এতে বামপন্থার লাভ তো হচ্ছেই না; উল্টে আজকের পরিস্থিতিতে বিজেপির স্পেসটা বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিজেপির বিরোধিতা করতে গেলে সেটাও সঠিক পথে হওয়া উচিত। উচ্ছৃঙ্খলদের হাতে বামপন্থা আর বাঁদরের হাতে তরবারির লম্ফঝম্পে দিনের শেষে রাজনৈতিক লাভ হচ্ছে বিজেপিরই।
11) অবিলম্বে বুদ্ধিজীবীদের উচিত বাবুলের উপর এই আক্রমণের বিরোধিতা করা। এতে বিজেপির পক্ষে বলা হবে না। বরং বিজেপির পক্ষে সহানুভূতির হাওয়ায় একটা ব্যারিকেড দেওয়া যাবে। এই অগণতান্ত্রিক বাধা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সব দলের সরব হওয়া উচিত। একা বিজেপি প্রতিবাদী থাকলে লাভটাও একা তারাই নেবে।





























































































































